যেভাবে নিজেদের গ্রাম রক্ষা করেছে সাতক্ষীরার উপকূলের মানুষ

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সোমবার (২৭ মে) দুপুরের পরে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলের নদ-নদীতে ৫ থেকে ৭ ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। এসময় দমকা হাওয়ায় প্রবল বেগে জোয়ারের পানি আছড়ে পড়তে থাকে উপকূলের বেবিাঁধের উপর। নিমিষেই বাধ ভেঙে নিয়ে যেতে থাকে নদী গর্ভে। কিন্তু স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় প্লাবন থেকে বেঁচে গেছে উপকূলের শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার গ্রামের পর গ্রাম।

প্রচন্ড ঝড়ের মধ্যেও স্থানীয়রা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীর বেড়িবাঁধের ওপর মাটির আইল দিয়ে নদীর জোয়ারের পানি বাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ বন্ধ করে রাখে। এতে করে সম্ভাব্য প্লাবনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে গ্র্রামের পর গ্রাম ও হাজারো মৎস্য ঘের।

স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সোমবার উপকূলের নদ-নদী ছিল উত্তাল। এসময় স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি পাঁচ থেকে সাত ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। দমকা হাওয়ায়ার কারণে যা প্রবল আকারে আছড়ে পড়তে থাকে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধের উপর। এরই মধ্যে বেড়িবাঁধের ভাঙন ঠেকাতে ও বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালায় স্থানীয় লোকজন। এতে বেড়িবাধ ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়ে বেঁচে গেছে হাজারো মানুষের বসতভিটা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পাউবো যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করায় বেশির ভাগ বেড়িবাঁধের উচ্চতা কমে যাওয়ায় নদ-নদীতে বড় জোয়ারের চাপ সামলানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।

আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামের রুহুল আমিন মোড়ল জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল যেদিন রোববার (২৬ মে) রাতে উপকূল অতিক্রম করে সেদিন আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া খোলপেটুয়া নদীর জোয়ার পানির উচ্চতা ও বাতাসের গতিবেগ ছিল কিছুটা স্বাভাবিক। কিন্তু পরেরদিন সোমবার (২৭ মে) দুপুরের পর থেকে নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বাতাসের গতিবেগও বাড়তে থাকে। রাতে প্রচন্ড দমকা হাওয়ার সাথে নদীর জোয়ারের পানি প্রবল বেগে আছড়ে পড়তে থাকে বেড়িবাঁধের উপর। এর ফলে বিছট মোড়ল বাড়ি ও সরদার বাড়ির সামনের বাঁধ উপচে নদীর পানি লোকালয়ে ঢোকা শুরু করে। সাথে সাথে গ্রামবাসিদের সাথে নিয়ে বাঁধে মাটি দিয়ে কোন রকমে উচু করে পানি প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করি। প্রায় রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করে এবারের মত বেড়িবাঁধটি রক্ষা করতে সমর্থ হয় গ্রামবাসি।

তিনি আরো বলেন, নদীর পানির উচ্চতার চেয়ে বাঁঁধের উচ্চতা অনেক স্থানে কমে গেছে। যে কারণে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে তা বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করে। একারণে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ আরো উচু করে বা টেকসহি বেড়িবাঁধ নির্মাণে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান।

শ্যামনগরের গাবুরা গ্রামের হাফিজুর রহমান জানান, ঝড়ের পরেরদিন দুপুরের জোয়ারে খোলপেটুয়া নদীতে পাঁচ থেকে সাত ফুট পানি বেড়ে যায়। এর ফলে ডুমুরিয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে দেখে তাৎক্ষণিক এলাকাবাসী নদী রক্ষা বাঁধের ওপর মাটির আইল দিয়ে উঁচু করে দেয়। এতে এ যাত্রাই কোনো মতে রক্ষা পাওয়া গেছে।

একই কথা বলেন পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মাসুম বিল্লা জানান, কপোতাক্ষ নদের পানি বেড়ে যাওয়ায় বেড়িবাঁধ উপচে পাতাখালি এলাকায় পানি প্রবেশের উপক্রম হয়। এসময় এলাকার লোকজন বেড়িবাঁধের ওপর মাটির আইল দিয়ে নিজেদের গ্রামকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। রেমালের প্রভাবে এই এলাকার বহু বেড়িবাঁধ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দ্রুত এসব বাঁধ সংষ্কার করা না হলে যে কোন সময় ভেঙে ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর সেকশন অফিসার (এসও) সাজ্জাদুর রহমান জানান, বেড়িবাঁধ নির্মাণে গাবুরায় মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের তুলনায় জোয়ারের সময় নদীতে ৫-৭ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে সেই তুলনায় ভাটায় পানি নামেনি। এজন্য বেড়িবাঁধগুলো একটু ঝুঁকির মধ্যে ছিল। অনেক জায়গায় বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানির প্রবেশের উপক্রম হয়েছিল। তবে কোথাও বাঁধ ভাঙেনি। স্থানীয়দেগর তাৎক্ষনিক প্রচেষ্টায় এখন এসব বাঁধের অবস্থা অনেক ভাল।

এদিকে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী এম সালাউদ্দীন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল। শ্যামনগরকে ঘিরে থাকা উপকূল রক্ষা বাঁধের প্রায় ১২৯ কিলোমিটারের মধ্যে সাত/আটটি পয়েন্টের প্রায় দুই কিলোমটিার ঝুঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলের নদ-নদীতে জোয়ার বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশ কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা সেগুলো এসেস করার চেষ্টা করছি।

একই কথা জানালেন, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, তার বিভাগের আওতাধীন ১৫ এর অধিক পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো পয়েন্টে কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

খুলনার সময়

একটি সৃজনশীল সংবাদপত্র

আমাদের ফেসবুক পেজ

আজকের দিন-তারিখ

  • রবিবার ,রাত ৩:৫২
  • ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  • ১৩ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিন