সাতক্ষীরায় দেলোয়ার হোসেন নামের এক ব্যবসায়িকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যার অভিযোগে তৎকালীন পুলিশ সুপার সাজ্জাদ হোসেন ও সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তারসহ ১০ পুলিশ কর্মকর্তার নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা আরও চার জনকে আসামী করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের স্ত্রী মোছাম্মাৎ শাহানারা খাতুন বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার বিষয়টি আমলে নিয়ে আদালতের বিচারক চাঁদ মো. আব্দুল আলীম আল রাজী আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য খুলনা রেঞ্জের পুলিশের উপ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় অন্যান্য আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহম্মেদ হাসেমী, সদর থানার ওসি মারুফ হোসেন, গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক শাহারীয়ার হোসেন, সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অনুপ কুমার দাস, গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রবিন মন্ডল, মিজানুর রহমান, এএসআই রাজু আহম্মেদ ও বিষ্ণুপদ। নিহত দেলোয়ার হোসেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদহা মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা ও একটি পানি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ছিলেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, বাদীর স্বামী দেলোয়ার হোসেন ২০১৮ সাল থেকে বাঁশদহা বাজারে বিশুদ্ধ খাবার পানি প্রস্তুত ও সরবরাহের নতুন ব্যবসা শুরু করেন। এ সময় তার ব্যবসায় কোন সরকারি অনুমোদন ছিলো না। ২০১৮ সালে ১২ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মিজানুর রহমান ও সহকারী উপ-পরিদর্শক রাজু আহম্মেদ বাদীর স্বামী দেলোয়ার হোসেনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আহম্মেদ হাসেমী ব্যবসা সংক্রান্ত কাগজপত্র না থাকায় তার কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। পরের দিন তিনি (বাদী) পুলিশ সুপার সাজ্জাদ হোসেনের কাছে অভিযোগ করেন। পুলিশ সুপার ভিকটিমকে সহকারী পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তারের কাছে পাঠিয়ে দেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে পুলিশ ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই সন্ধ্যায় কয়েকজন পুলিশ ভিকটিম দেলোয়ারকে বাড়ি থেকে তুলে আনে। রাত ১০টার দিকে উপ-পরিদর্শক মিজানুর রহমান ও সহকারী উপ-পরিদর্শক রাজু আহম্মেদ বাদীর কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে স্বামীকে রাতেই ক্রসফায়ার দেওয়ার হুমকি দেয়া হয়। টাকা যোগাড়ের জন্য কয়েক দিন সময় চাইলে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা চলে যায়। পরে ১৫ জুলাই সকালে বাঁশদহা কয়ার বিল নামক স্থানে দেলোয়ারের গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পায় তারা। দেলোয়ারের গলার বাম কাধেঁর উপরে একটি ও ডান বোগলের নিচে পিঠের দিকে একটি গুলির চিহ্ন দেখা যায়।
এ সময় আবুল কালাম আজাদ নামের আরও একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ সেখানে পড়ে ছিলো। চাঁদার দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় দেলোয়ারকে পুলিশ ক্রসফায়ারের নামে গুলি করে হত্যা করেছে বলে বাদী মনে করেন। ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে দেলোয়ারের লাশ তার স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মামলা করার অনুকূল পরিবেশ না থাকায় ও বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার এ মামলা দায়ের করা হলো।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরা জজ কোর্টের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি সিরাজুল ইসলাম ও বাদী পক্ষের আইনজীবী এড: মো. হাফিজুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।