প্রযুক্তি খাতে নিষেধাজ্ঞার রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এবার টেক্সটাইল খাতের ২৬ কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের টেক্সটাইল কোম্পানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। দেশটির ২৬টি তুলা ওয়্যারহাউস ফ্যাসিলিটি থেকে আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ওয়াশিংটন বলছে, চীন উইঘুরের সংখ্যালঘুদের দিয়ে জোরপূর্বক শ্রম দিয়ে এসব পণ্য তৈরি করাচ্ছে। নিজেদের সরবরাহ তালিকা থেকে এমন পণ্য সরাতেই এ পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের উইঘুর ফোর্সড লেবার প্রিভেনশন অ্যাক্ট এনটিটি তালিকায় সবশেষ এ কোম্পানিগুলোকে যুক্ত করা হয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, চীনা কর্তৃপক্ষ জিনজিয়াং অঞ্চলে উইঘুরসহ অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের জন্য শ্রম শিবির তৈরি করেছে। যদিও চীন সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। মার্কিন ডিপার্টমেন্ট হোমল্যান্ড সিকিউরিটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞায় পড়া কোম্পানির বেশকিছু জিনজিয়াংয়ের বাইরে অবস্থিত। তবে এসব কোম্পানি ওই অঞ্চল থেকে মূলত তুলা সংগ্রহ করে। বৈশ্বিক তুলা উৎপাদনের ২০ শতাংশ এ অঞ্চল থেকে আসে।যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে ওয়াশিংটনের মার্কিন দূতাবাস। দূতাবাসের এক মুখপাত্র বলেন, উইঘুরের সংখ্যালঘুদের দিয়ে জোরপূর্বক শ্রম প্রতিরোধ আইন জিনজিয়াং প্রদেশের স্থিতিশীলতা এবং চীনের উন্নয়নের গতিরোধ করার জন্য এটি যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলমাত্র।
উইঘুর ফোর্সড লেবার প্রিভেনশন অ্যাক্ট এনটিটি আইন ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র পাস করে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটি চীনের ৬৫ কোম্পানির ওপর এটি প্রয়োগ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দিয়ে গোয়েন্দা বেলুন ওড়ানোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ প্রতিষ্ঠানকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে কয়েকটি গোয়েন্দা বেলুন শনাক্ত হয়। এ নিয়ে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছিল। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা সব প্রতিষ্ঠান চীনের।মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ জানিয়েছে, এসব কোম্পানি মার্কিন উপকরণ ব্যবহার করে নজরদারি বেলুন ও দেশটির সামরিক বাহিনীর জন্য ড্রোন তৈরি করছিল। ফলে এগুলো মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যে চায়না ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজি গ্রুপের কয়েকটি ইউনিটও রয়েছে।
রেডিও ফ্রি এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা এসব চীনা কোম্পানির মধ্যে ২২টি কোম্পানি মার্কিন কোয়ান্টাম প্রযুক্তি খাতের সহায়তা নিয়ে চীনের সামরিক বাহিনীর জন্য ড্রোন তৈরি করেছে। এছাড়া ১১টি কোম্পানি নজরদারি বেলুন তৈরি করেছে এবং বাকিরা ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ৩৭টি কোম্পানিসহ মোট ৩৫৫ প্রতিষ্ঠান মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে।