খুলনার সময়: খুলনা জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং সিভিল সার্জনের আওতাধীন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলির আউটসোর্সিং কর্মচারীদের পাওনা বেতনের দাবিতে আবারো শ্রম দপ্তরে লিখিত আবেদন দেয়া হয়েছে। ওই আবেদনপত্রে ঠিকাদারের মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত খুলনার ২১১ জন কর্মচারীর বকেয়া পাঁচ মাসের মজুরিসহ নগদ নেয়া টাকা আদায়ের দাবি জানানো হয়েছে। এদিকে, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন খুলনার কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের একজন পরিদর্শক বলেন, আউটসোর্সিং কর্মচারীদের মজুরি না দেয়াসহ তাদের অভিযোগের কারণে মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ রয়েছে।
নতুন করে লোক নিয়োগের নামে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ আদায়ের জনশ্রমিত। আউটসোর্সিং কর্মচারীদের পক্ষ থেকে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক বরাবর দেয়া লিখিত অভিযোগে বলা হয়, তারা মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজ’র অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে খুলনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালসহ খুলনার সিভিল সার্জনের আওতাধীন বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ করে করোনা মহামারির সময়ে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করলেও তাদের মজুরি দেয়া হয়নি। তারা ২১১ জন কর্মচারী বিভিন্ন পদে নিয়োজিত থেকে কাজ করলেও এখনও পাঁচ মাসের মজুরি পাওনা রয়েছে।
এ বিষয়টি জানিয়ে তারা উক্ত দপ্তরে বিগত মার্চ মাসে লিখিত আবেদন করেন। ওই আবেদনের পর উক্ত দপ্তর থেকে মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজকে গত ২৮ মার্চ পত্র দিয়ে সাত দিনের মধ্যে পাওনা পরিশোধের কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত তাদের পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। যে কারণে তারা অনেকটা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এর পরেও তাদের পাওনা আদায়ের পরিবর্তে উক্ত দপ্তরের দু’জন পরিদর্শক যথাক্রমে তাপস কুমার মীরবর ও শিউলি বিশ্বাস বিভিন্ন সময়ে কর্মচারীদের ফোন দিয়ে বলেন, ‘অফিসে আসেন বিষয়টি মিমাংসা করে দেই’। তারা তাদের পাওনা টাকা আদায়ের কথা বললে তারা বলেন, এটি তারা পারবেন না, বরং তারা যেন তাদের আবেদন উঠিয়ে নেন এমন চাপও দেন। এর আগে মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজের মালিক ইকতিয়ার উদ্দিন নিজে আবার কখনও তার নিয়োজিত কোন কোন প্রতিনিধি কর্মচারীদের কাউকে কাউকে ফোন দিয়ে উক্ত দপ্তরে দেয়া অভিযোগ তুলে নেয়ার চাপ দেন।
আবেদনপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, তারা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। চাকরি নেয়ার সময় এমনিতেই তাদেরকে জামানতের নামে মোটা অংকের নগদ অর্থ ঠিকাদারকে দিতে হয়েছে। এরপর আবার বেতন না দিয়ে ঘুরানো হচ্ছে। এমন অবস্থায় তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে বরং ঠিকাদারের পক্ষ নিয়ে যেভাবে তাদেরকে মিমাংসার নামে টাকা না দেয়ার ফন্দি আঁটা হচ্ছে তাতে তারা মর্মাহত। এমনটি হলে তাদের ওপর অবিচার করা হবে এবং তাদের যাওয়ার আর কোন জায়গা থাকবে না। সুতরাং তাদের পাওনার বিষয়টি মানবিক হিসেবে বিবেচনা করে দ্রুত যাতে তারা পাওনা পেতে পারেন তার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
এ ব্যাপারে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, খুলনার উপ-মহাপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আবেদনপত্রটি তিনি পেয়েছেন। শীঘ্রই দু’পক্ষকে নিয়ে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ ব্যাপারে ফারুক হোসেন হেমায়েত বলেন, ১০৭ ও ৯৫ জনের লটের বেতন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হিসাবে। তারা কখন পরিশোধ করবেন সেটি তাদের ব্যাপার। আর একশ’ জনের লটের মেয়াদ গত বছর ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। এখন কেউ কাজ করলে তাদের নিজ দায়িত্বে করছেন। এছাড়া নবায়নের নামে সত্তর হাজার টাকা করে নেয়ার অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে তিনি বলেন, তার কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।যদিও এ ব্যাপারে সোমবার খুমেক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরীকে কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।