অনলািইন ডেস্ক: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বাইরে যারা একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে প্রার্থী হয়েছেন, তারা এবার ‘বেঁকে বসেছেন’। দলের পক্ষ থেকে সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তারা। আর এর জের ধরে রীতিমতো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ভাবছেন তারা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৬৫ আসনে প্রার্থী দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে জাতীয় পার্টি। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের সমঝাতা হওয়া আসনের সংখ্যা ২৬। এসব আসনে আওয়ামী লীগ তথা নৌকা প্রতীকের কোনো প্রার্থী নেই জাপা প্রার্থীদের বিপক্ষে। তবে বাকি ২৩৯টি আসনের সবগুলোতেই নৌকার প্রার্থীসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই করতে হবে জাপা প্রার্থীদের।
জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সমঝোতার বাইরে থাকা ২৩৯ আসনের প্রার্থীরা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন। তারা বলছেন, নির্বাচন ঘিরে দল থেকে আর্থিসহ নানা ধরনের যে সহযোগিতা পাওয়ার কথা, তার কিছুই তারা পাচ্ছেন না। এ নিয়েই ক্ষোভ দানা বেঁধেছে তাদের মধ্যে।
আজ মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) এরকম শতাধিক প্রার্থীর বনানীতে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানেই তারা ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর মতো কঠোর সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়ে আসতে পারেন বলে আভাস দিয়েছে পার্টির একাধিক সূত্র। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রার্থীও এমন তথ্য জানিয়েছেন সারাবাংলাকে।
জাপার একাধিক সূত্র বলছে, ভোটের মাঠে জাপার ২৬৫ জন প্রার্থী থাকলেও এবার প্রায় ১৮০০ ফর বিক্রি করেছিল জাতীয় পার্টি। প্রতিটি ফরমের দাম ছিল ৩০ হাজার টাকা। সে হিসাবে মনোনয়ন ফরম বিক্রি থেকেই প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা আয় হয়েছে দলের। এ ছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে আরও কিছু তহবিলও ছিল। এসব অর্থ থেকে দলের প্রার্থীরা নির্বাচনি খরচ দাবি করে আসছেন। কিন্তু পার্টি থেকে তাদের কোনো খরচ বরাদ্দ করা হয়নি। এ নিয়ে প্রার্থীরা ব্যাপক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬ আসনে সমঝোতা নিয়েও বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে জাতীয় পার্টির মধ্যে। অন্য আসনের প্রার্থীরা বলছেন, এই আসনগুলোতে সমঝোতার মাধ্যমে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা নিজেদের আখের গোছানোর কাজটি সফলভাবে করেছেন। দলের বাকি প্রার্থী কিংবা পার্টির সাংগঠনিক দিক নিয়ে তারা কোনো চিন্তাভাবনাই করেননি।
ভোটের মাঠে থাকা একজন জাপা প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘মনোনয়ন ফরম বিক্রির সময়ও জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় ছিল। কথা ছিল, কোনো জোট হবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলের স্বার্থ না দেখে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬টি আসনে সমঝোতা করলেন।’
জাপার এই প্রার্থী বলেন, ‘এর মাধ্যমে তিনি (জি এম কাদের) প্রমাণ করেছেন, আমাদের ব্যবহার করে তিনি নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখেছেন। এই সমঝোতায় জাতীয় পার্টির কোনো স্বার্থ নেই। বরং এতে জাতীয় পার্টির আদর্শকে হত্যা করা হয়েছে। জাপা যে দেউলিয়া হওয়ার পথে, এই পদক্ষেপ তারই বহিঃপ্রকাশ।’
এদিকে জাপারে আকেটি সূত্র বলছে, যে ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সমঝোতা হয়েছে, সেই আসনগুলো নিয়েও জটিলতা কাটছে না। জাপা প্রার্থীরা বলছেন, নৌকার প্রার্থী না থাকলেও সব আসনে তারা জোটসঙ্গী আওয়ামী লীগের সমর্থন ও সহায়তা পাচ্ছেন না। বরং ওইসব আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। তাদের পক্ষেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ কাজ করছে। এতে জাপা প্রার্থীরা চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপার সমঝোতার আসনের এক প্রার্থী বলেন, ‘২৬ আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু যতদূর শুনতে পাচ্ছি, ১৪ থেকে ১৬টি আসনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আমাদের প্রার্থীদের সহায়তা করছে। বাকি আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের কোনো সহায়তা মিলছে না।’ এসব আসনে সমঝোতা হলেও জাপা প্রার্থীদের ভুগতে হতে পারে বলে মনে করছেন এই প্রার্থী।
এসব বিষয় নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে দলের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাপা প্রার্থীরা ভোটের মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। এরপর তাদের পক্ষ থেকে ভিন্ন ধরনের কোনো সিদ্ধান্তও আসতে পারে। সেই সিদ্ধান্ত নির্বাচন বর্জন হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে মনে করছেন জাপার এই নেতা।