ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার পর যা করতে হবে

ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার পর যা করতে হবে

স্বাস্থ্য সময়: যেকোনো রোগ থেকে সেরে ওঠার পর স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসতে কিছুটা সময় লাগে। এই সময়টায় সাবধানের সঙ্গে নিয়ম মেনে চলা উচিত। তবে এই সাবধানতা ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। অসুস্থতার আগে রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা যেমনটা ছিল, অসুস্থ হওয়ার পর তা ফিরে পেতে একটু সময় লাগে বৈকি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই সময়কে Convalescent period বলে। এই সময় ধীরে ধীরে শরীর ও মন পুনর্গঠন হয়, যাতে সপ্তাহখানেক বা কারো ক্ষেত্রে মাসখানেকও সময় লাগতে পারে। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস, কিডনি, শ্বাসরোগ বা অন্য কোনো রোগ থাকে, তাদের বেলায় কিছু বেশি সময় ধরে চলে। শরীর পরিপূর্ণভাবে গড়ে ওঠে বলে এই সময়ে কাজের মাত্রা বা চাপ তাড়াতাড়ি আগের মাত্রায় বাড়ানো ঠিক হবে না; বরং ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। দু-তিন সপ্তাহ সময় নিন ডেঙ্গুকে ঝড় ও সাইক্লোনের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। ঝড় ও সাইক্লোন হলে যেমন বাড়িঘর দলিত-মথিত হয়ে যায়, ডেঙ্গু হলে শরীর ও মনে ঠিক ওই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঝড় ও সাইক্লোন শেষ হওয়ার পর যেমন করে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরু করতে কিছু সময় লাগে, তদ্রুপ ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার পরও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরু করতে খানিকটা সময় নেওয়া উচিত। ব্রেনের অ্যানালাইটিক্যাল ক্ষমতা হ্রাস পায় ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার পর রোগী দুর্বল থাকে, অবসাদগ্রস্ত থাকে, মাথা হালকা থাকে, চলাফেরার সময় কিছু ভারসাম্যহীনতা থাকে, গভীর ও নিবিড়ভাবে কাজে মনোনিবেশ করা যায় না। যাঁরা প্রফেশনাল কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাঁরাও জ্বর সেরে ওঠার পর গভীরভাবে কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন না।

যেমন-চিকিৎসকরা জটিল রোগী নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে পারেন না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গভীরে যেতে পারেন না। অর্থাৎ ব্রেনের অ্যানালাইটিক্যাল ক্ষমতা হ্রাস পায়, তাই এই সময়ে ওই ধরনের কাজে হাত দেওয়া ঠিক নয়। বরং ওই ধরনের কাজ করতে গেলে পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি পাওয়া যাবে না। এক ধরনের অবসাদ ও হতাশা সৃষ্টি হবে। কিন্তু সপ্তাহ দু-তিনেক পর রোগীর শারীরিক ও মানসিক কাজ করার ক্ষমতা আগের মতোই ফিরে আসবে। তাই ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার পর শিথিলতার সঙ্গে দু-তিন সপ্তাহ কাটাতে হবে। করণীয় যাঁরা শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে উপার্জন করেন, তাঁরাও দ্রুত ওই ধরনের কাজে যাবেন না। যেমন-রিকশাচালক সঙ্গে সঙ্গে রিকশা চালানো শুরু করবেন না। যিনি মাটি কাটেন, তিনিও সঙ্গে সঙ্গে মাটি কাটতে যাবেন না। যিনি বোঝা বহন করেন, তিনিও সঙ্গে সঙ্গে বোঝা বহন করতে যাবেন না। সপ্তাহ দুয়েক শিথিলতার সঙ্গে সময় কাটান, তারপর আস্তে আস্তে নিজ কাজে হাত দেন। এ সময় কিছু করণীয় হলো- পর্যায়ক্রমে চলাফেরা শুরু করুন প্রথমে বাড়িতে চলাফেরা করুন, তারপর বাড়ির আঙিনায় যান, এরপর উপাসনালয়, বাজার, অফিস-আদালতে যাওয়ার চেষ্টা করুন। অফিস-আদালতে হালকা রুটিন ওয়ার্ক করুন। এভাবে সপ্তাহ দু-তিনেক কাটান। তারপর যাঁর যে কাজ সে কাজ শুরু করুন। স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়া শুরু করুন ডেঙ্গুর সময় রোগীরা সাধারণত তরল, নরম এবং সহজপাঁচ্য খাবারের ওপর নির্ভরশীল থাকে। জ্বরের সময় যে খাবারগুলো খেতে বারণ করা হয়েছে, সেগুলোকে এখনো না বলুন। আর যেগুলো খেতে বলা হয়েছে, সেগুলোকে এখনো হ্যাঁ বলুন। তরল, নরম ও সহজপাঁচ্য খাবার থেকে আস্তে আস্তে উঠে আসুন। তরল খাবার আগের মতো বেশি না খেয়ে কিছুটা কমিয়ে ফেলুন। ফলমূল যেভাবে বেশি করে খেয়েছেন, সেভাবে না খেয়ে স্বাভাবিক সুস্থ মানুষ যেভাবে খায়, সেভাবে খেতে থাকুন। নরম খাবার, যেমন জাউভাত না খেয়ে এখন ভাত খান। তবে এ পর্যায়ে গুরুপাক খাবার, যেমন-রোস্ট, বিরিয়ানি ইত্যাদি না খেয়ে লঘুপাক বা কম মসলা দিয়ে সহজে হজম হয় এমন খাবার খান। এই সময় ব্যায়াম নয় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আগে যদি জিমে যাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার পর কিছুদিন জিম থেকে দূরে থাকুন। প্রয়োজন হলে এক বা দুই মাস অপেক্ষা করুন। নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস থাকলেও এই সময় ব্যায়াম করবেন না। পর এই অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটাতে হবে। পারতপক্ষে রাত ১০টার পর আর জেগে থাকবেন না। শোয়ার ঘর ছিমছাম করে, বিছানা ছিমছাম করে, বাতি নিভিয়ে রাত ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ুন। মনে রাখবেন, দিনে কাজ করার মধ্যে, জেগে থাকার মধ্যে দেহের যে ক্ষতি হয়, রাতে ঘুমানোর পর সে ক্ষতি পুষিয়ে যায়। রাতের বেলায় ক্ষতিপূরণকারী কিছু হরমোন যেমন : ACTH, steroid, growth hormone ইত্যাদি শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নি:সৃত হয়। দিনের বেলায় জেগে থাকার ফলে যে বিষাক্ত পদার্থ তৈরি হয়, রাতে ঘুমানোর ফলে ওই বিষাক্ত পদার্থ নি:শেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ পরিপূর্ণ নিবিড় ঘুমের মাধ্যমে ব্রেন সতেজ হয়, মন সতেজ হয়, শরীরও সতেজ হয় এবং ক্লান্তি দূর হয়।

দিনের বেলায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন : অন্য সময় দিনের বেলায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিলেও ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার পর দিনে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার অভ্যাস করুন। দুপুরে খাওয়ার পর ঘণ্টাখানেক ঘুমানোর চেষ্টা করুন। এ ছাড়া দিনের অন্যান্য সময় ঘণ্টাখানেক পর পর ৫-১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে হাত-পা ছেড়ে শুয়ে থাকুন। অফিস-আদালতে থাকলে ৫-১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাটান।

মানসিক চাপ নেবেন না : এই সময়ে কখনো মানসিক চাপ নেবেন না। কোনো কারণ থাকলেও মেজাজ খারাপ করবেন না। বরং মেজাজ পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, তথা মন সতেজ ও ফুরফুরে রাখবেন। সব শেষে আবার বলি, ডেঙ্গু সেরে ওঠার পর সপ্তাহ দুয়েক, এমনকি মাসখানেক সাবধানে থাকবেন। কথায় বলে-সাবধানের মার নেই। তবে খুব বেশি সমস্যা মনে করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

খুলনার সময়

একটি সৃজনশীল সংবাদপত্র

ফেসবুক পেজ এ সব খবর

আজকের দিন-তারিখ

  • বৃহস্পতিবার ,দুপুর ১২:১৮
  • ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
  • ২২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  • ২৩ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিন



আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিন

বাংলা বাংলা English English