আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনে জনগণ ও ভোটারের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। কে আসলো কে আসলো না সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা চাই জনগণ নির্বিঘ্নে তাদের ভোট দেবে, যাকে খুশি তাকে দেব। এটা না করতে পারলে বাংলাদেশ শেষ হয়ে যাবে। বিএনপি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে, সবাইকে সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে পাঁচ জেলার নির্বাচনী জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনা। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা রংপুরের পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট, রাজশাহীর নাটোর ও পাবনা এবং চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেন। বুধবার সিলেটে জনসভার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে তিনি।
শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে জনসভায় বলেন, জনগণকে সুযোগ দেন তারা তাদের পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দেবে। বিএনপি ভোট চুরি করতে পারবে না বলে নির্বাচনে আসে নি। নৌকা নূহ নবীর নৌকা, বিপদের বাহন। নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। এবার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নৌকায় ভোট চাই।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৮ সালে বিএনপি পেয়েছিলো ৩০ আসন আর আওয়ামী লীগ এককভাবে পেয়েছিলো ২৩৩ আসন। বিএনপি ভোটের কী বোঝে? অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের পকেট থেকে বেরোনো দল বিএনপি। আমরা মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করি, আর বিএনপির রজনীতি জ্বালাও-পোড়াও।
তিনি বলেন, অতীতে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করা হয়েছিল। জনগণের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে; এই প্রত্যয় নিয়েই সংগ্রাম করেছি। অনেক সংগ্রাম, ঘাত-প্রতিঘাত আমাদের পার করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে, কারাগারে যেতে হয়েছে। তারপরও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা ২১ বছর পরে ক্ষমতায় আসি। জনগণের সেবক হিসেবে যাত্রা শুরু করি। ৯৬ থেকে ২০০১ সাল ছিল ৭৫-এর পরে বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্বর্ণযুগ। শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের শান্তি দেখলে তাদের (বিএনপি) অশান্তি লাগে। (তারেক) ২০০৭ সালে মুচলেকা দিয়েছিলো আর রাজনীতি করবে না। এখন বিদেশে বসে রাজনীতি করছে। ভোটচুরির জন্য মানুষ খালেদা জিয়াকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছিলো।
এসময় আগামী বাংলাদেশের রূপরেখা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিও হবে স্মার্ট অর্থনীতি। সকলের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাই। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে চাই। আমরা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চাই। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংরাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলদেশ গড়েছি। এখন লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ডিজিটাল বাংলাদেশে হয়েছিলো বলেই ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার তৈরি হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, গেলো ১৫ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে, উত্তরবঙ্গে আর মঙ্গা দেখা যায় না। সব জেলায় উন্নতি হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি এসেছে। মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনসুরণ করে ২১ জেলা ভূমিহীন গৃহহীন মুক্ত জেলা হয়েছে। প্রায় চার কোটি মানুষ সরকারি ভাতার আওতায় সহায়তা পেয়েছেন। তিন কোটি ৯৪ লাখ ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা বৃত্তি পাচ্ছে। তিনি বলেন, কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতি ও ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছ, বেশি ভাড়া দিয়ে খাদ্য আমদানি করেছি যাতে মানুষের খাদ্য সংকট না হয়। করোনার সময় মানুষকে বাঁচাতে দুই হাতে টাকা খরচ করেছি। সবার টিকা নিশ্চিত করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্যমন্দা থাকবে। আমরা এক ইঞ্চি জমিও অনাবদী রাখবো না। আমি যা বলি তা আগে আমি নিজে করি। আমি কোনো অনবাদী জমি রাখিনি। তিনি আরও বলেন, বিএনপি কত মানুষকে হত্যা করেছে তার কোনো হিসাব নেই। আমাদের মা-বোনদের ওপর পাকিস্তানিরা যেভাবে নির্যাতন করেছে, সেভাবেই নির্যাতন করেছে। সেইসময় ফাহিমা, মহিমা, রুমা আত্মহত্যা করে নিজেদের ইজ্জত বাঁচান। এ রকম একটা তাণ্ডব শুধু নয়, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি যখন ক্ষমতায় তখন বাংলাদেশ ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। পাঁচ বার দুর্নীতিতে তারা বিশ্বে এক নম্বর হয়েছিলো। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, বাংলা ভাই, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, আমাদের কত নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে তার হিসাব নেই। আমরা বারবার তাদের হাতে আক্রমণের শিকার হয়েছি। তারপরও আমরা কিন্তু দমে যাইনি। বরং এগিয়ে গিয়েছি। আমি তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানাই, এত বাধা বিপত্তি, অত্যাচার, নির্যাতন, সবকিছু সহ্য করে নেতাকর্মীরা সংগঠনকে ধরে রেখেছেন এবং এগিয়ে যাচ্ছেন।