যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি

এসএম আশরাফুল ইসলাম: সরকারি আইন ও নীতিমালার তোয়াক্কা না করে সাতক্ষীরা শহর ও উপজেলার মোড়ে মোড়ে বিক্রি হচ্ছে পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের সিলিন্ডার। নীতিমালা উপেক্ষা করে শহরের ফুটপাতে যত্রতত্র এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের ব্যবসা এখন রমরমা। শহর ও শহরতলির প্রায় প্রতিটি সড়ক এবং অলিগলির প্রতিটি মোড়ে এই ব্যবসা জমে উঠেছে। শহর জুড়ে অবৈধ এ ব্যবসার কারণে প্রকৃত লাইসেন্সধারী ডিলাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অপরদিকে গ্রাহকরাও হচ্ছেন প্রতারিত। এ সব অনিয়ম দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা বিস্ফোরক পরিদপ্তর অজ্ঞাত কারণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এসব সিলিন্ডার বিক্রির ফলে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সাধারণ মানুষ। ওষুধের দোকান, মুদি দোকান ও কাপড়ের দোকানেও চলছে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, যেখানে সেখানে দেদারছে চলছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি। শতাধিক দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হলেও জেলায় এলপি গ্যাস ব্যবসার জন্য লাইসেন্স রয়েছে মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন ব্যবসায়ীর। অনুমোদনবিহীন এসব দোকানগুলোতে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হওয়ায় বিপাকে সাধারণ মানুষ। সরকারি বিধি মোতাবেক গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির জন্য কমপক্ষে পাকা মেঝেসহ আধা পাকা ঘর, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক সক্ষমতা-সংক্রান্ত লাইসেন্সসহ অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার এবং মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। একজন ব্যবসায়ী এসব শর্ত পূরণ করলেই কেবল এলপি গ্যাস বিক্রির নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
লাইসেন্স ছাড়া কোন দোকানে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করা যাবে না। ২০০৩ সালের দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি যদি লাইসেন্স না নিয়ে বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবসা করে তবে তার তিন বছরের কারাদণ্ড ও অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। প্রয়োজনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সমস্ত মালামাল বাজেয়াপ্ত করা যাবে। কিন্তু এই আইন কেউ মানছেন না।
শহরের একাধিক চায়ের দোকানদাররা বলেন, আমরা এসব সিলিন্ডারগুলো শহরের পোস্ট অফিস মোড়, ফুড অফিস মোড়, পুরাতন সাতক্ষীরা বাজার, সরকারি কলেজ মোড়, কাটিয়া টাউন বাজারসহ বিভিন্ন দোকান থেকে ক্রয় করি, ফোন দিলেই ১০ মিনিটের মধ্যে চায়ের দোকানগুলোতে পৌছে যায়, ছোট বড় গ্যাস সিলিন্ডার। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় পিকআপ, ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে পৌছে যাচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। জেলার গ্রাম গঞ্জ হাটবাজারে প্রত্যেক জায়গায় চায়ের দোকানগুলোতে বসলেই দেখা যায় গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার। উক্ত চায়ের দোকানগুলোতে বেশিরভাগ সিলিন্ডার গুলো রাখা হয়েছে একেবারেই চুলার পাশে, যেকোনো সময় বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটার আশংকা আছে। তাছাড়া বেশ কয়েকটি দোকানে লক্ষ করা গেছে গ্যাসের সিলিন্ডারের পাশে বসেই ধুমপান করার দৃশ্য। সিলিন্ডারের পাশেই ম্যাচ ঠুকিয়ে জালানো হয় সিগারেট, ম্যাজের কাঠিটা আগুনসহ ফেলা হয় সিলিন্ডারের পাশেই। গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির ক্ষেত্রে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি দেয়ার বিধান থাকলেও কখনো কোন অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়নি এ জেলায়। নজরদারি না থাকার কারণে যত্রতত্র চলছে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি। ফলে সাধারণ মানুষ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডার অনেকটা বোমার মতো, গ্যাস বিক্রি করতে হলে অবশ্যই পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স, বিস্ফোরক লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা থাকতে হবে, তা না হলে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে পারবে না।
গ্যাস বিক্রেতারা জানান, বিস্ফোরক লাইসেন্স নিতে অনেক টাকা খরচ হয়, কিন্তু অবৈধ ব্যবসায়ীদের কারণে বৈধ ব্যবসায়ীদের বিক্রি কমে গেছে। তাছাড়া এখন ইজিবাইকেও সিলিন্ডার লাগিয়ে চালানো হচ্ছে, যা সম্পূর্ন বেআইনি। শহরের রেজিস্ট্রি অফিস পাড়ার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম ও মাশরুবা এন্টারপ্রাইজ’র সত্বাধিকারী ইব্রাহিম খান বাবু জানান, গ্যাসের ব্যবহার অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এখন চায়ের দোকানগুলোতেও চলছে গ্যাসের ব্যবহার। বিষয়টি দিন দিন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ ঝুঁকিতে পড়ছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

খুলনার সময়

একটি সৃজনশীল সংবাদপত্র

আমাদের ফেসবুক পেজ

আজকের দিন-তারিখ

  • সোমবার ,সন্ধ্যা ৬:২১
  • ৭ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২২ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  • ৪ রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিন