রাজধানীর বাইরের বুদ্ধিজীবীদের কতটুকু মনে রাখতে পেরেছি!

  • রিয়াদ হোসেন

দিনটি ছিলো ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরিকল্পিত সবশেষ একটি হত্যাযজ্ঞ ছিল এই দিনে। নিশ্চিত পরাজয় আর নিজেদের শেষ রক্ষার্থে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে যায় এদেশের সূর্য সন্তান মুনির চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, শহীদুল্লাহ কায়সারসহ আরো অনেককে। এসব বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বড় একটি পরিকল্পিত বিষয় ছিলো, স্বাধীন বাংলা গঠনের পর যারা দেশটি পরিচালনা করবে তাদের আগে থেকে সরিয়ে ফেলা। আর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী তাদের এই দূরদর্শী পরিকল্পনার বাস্তবায়নও করেছিলো। তাদের হত্যার ফলে এই জাতির যে সংকট তৈরী হয়েছিলো; তা থেকে আজও উত্তরণ হতে পারে নি আমরা। আজ ১৪ই ডিসেম্বর। বিনম্র শ্রদ্ধায় নিহত সকল বুদ্ধিজীবীকে স্মরণ করছি। কিন্তু এই স্মরণ কি শুধু রাজধানীতেই বড়সড় করে পালিত হচ্ছে? নাকি ঢাকার বাইরেও যেসব বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল তাদেরকেও বিনম্র চিত্তে আমরা স্মরণ করছি? প্রতি বছরের মতো এবারও হয়তো  আমরা রাজধানীর রায়েরবাজারে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছি; তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। কিন্তু ঢাকার বাইরে বিভাগ বা জেলা পর্যায়ে যেসব শিক্ষক, চিকিৎসক পেশার বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিলো তাদের স্মরণে হয়তো আমরা বরাবরের মতোই তেমন কিছু করতে পারছি না। এ ব্যর্থতা নিতান্তই আমাদের, এ জাতির৷

এই বুদ্ধিজীবী দিবসকে কেন্দ্র করেই সারা দেশে সরকার ছুটি ঘোষণা করা হলেও রাজধানীর মতো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমরা তাদের স্মরণ করতে পারছি না। ইতিহাসবিদরা বলছেন, সংখ্যার দিক থেকে বিবেচনা না করে যদি জনসংখ্যা আর মৃত্যুর হার বিবেচনা করা হয় তাহলে ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে আরো বেশি সংখ্যক বুদ্ধিজীবী মারা গেছেন। বাংলাপিডিয়ার তথ্য মতে, বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে কুমিল্লায় মারা গেছে ৮৬ জন, যশোরে ৯১, রংপুরে ৭২, দিনাজপুর ৬১, পাবনা ৫৩, ময়মনসিংহ ৭৫, ফরিদপুর ৪৩, চট্টগ্রাম ৬২, খুলনা ৬৫, বরিশাল ৭৫ এবং রাজশাহীতে ৫৪ জনসহ সব মিলিয়ে বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা ১১শ ১১ জন। তাহলে জাতির এই সূর্য সন্তানদেরকে আমরা দিনে দিনে কিভাবে ভূলে যাচ্ছি! তাদের অবদান কিভাবে আমরা অস্বীকার করছি! এজন্য শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশে নিহত বুদ্ধিজীবীদের আমাদেরকে বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করতে হবে। যাতে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমরা  তাদেরকে পরিচিত করে যেতে পারি।

বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন এদেশের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির অন্যতম রূপকার। তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা, সৃজনশীল কর্মকাণ্ড, উদার আর গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা ছিলো জাতীর মূলমন্ত্র। জাতির বিবেক হিসেবে খ্যাত দেশের বুদ্ধিজীবীরা ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করেছেন। যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারকে পরামর্শ প্রদানসহ বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিতে অবদান রেখেছেন। তাদের এ অবদান জাতি কখনও ভুলতে পারে না। একে একে আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করেছি। তাদের ত্যাগ, অবদানের স্মৃতি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করতে হবে। ইতোমধ্যে যা দেশের অনেক জায়গায় বধ্যভূমি সংরক্ষণ কাজ শুরু হয়েছে। তবে এ ধরনের কাজ আরো আগে থেকে শুরু করতে হতো। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়েছে। তারা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির চেষ্টা করছে। এগুলোকে একটি সূত্রে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তালিকার পদক্ষেপ নিতে হবে। সাথে তাদের জীবন বৃত্তান্ত এবং অবদানের কথা লিপিবদ্ধ করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য স্মৃতির পাতা তৈরী করে রাখতে হবে। যাতে আরো পঞ্চাশ বছর পরেও জাতি তাদের বিনম্র চিত্তে স্মরণ করে। পরিশেষে আজকের এই দিনে বিনম্র শ্রদ্ধায় তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।

লেখক: রিয়াদ হোসেন, খুলনা

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

আমাদের ফেসবুক পেজ

আজকের দিন-তারিখ

  • শনিবার ,সকাল ১১:৩৩
  • ২৭ জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১২ শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  • ২১ মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিন