যতই নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে ততই সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে উত্তেজনা বাড়ছে। এবারের আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে গত দুই বারের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মো. আশরাফুজ্জামান আশু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী না থাকায় জেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সমর্থন পেয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। তবে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আশু স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কথা বলে ভোট বাড়াতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দুই দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচনী লড়াইয়ে সাতক্ষীরা-২ আসনের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে হুমকিসহ নানা অভিযোগ উঠলেও এবার বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবির বিরুদ্ধে জাপার প্রার্থীর উসকানিমূলক এবং মানহানিকর বক্তব্য প্রদানের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের ভিডিওতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আশরাফুজ্জামান আশুকে বলতে শোনা যায়, ‘২০১৪ সাল থেকে আমাদের এখানে যিনি সদস্য হিসেবে রয়েছেন তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার পরে কী কাজগুলো আমাদের দেখিয়েছেন আপনারা বলেন? কোনো কাজ কী আমাদের দেখাইছেন? কোনো কাজ দেখাননি। দুর্নীতিতে ছেঁকে ফেলেছেন ওনি সাতক্ষীরা। সাতক্ষীরার মানুষ তাকে ঘৃণা করে, এ ঘৃণা করার কারণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দেননি, তাই তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন।’
মীর মোস্তাক আহমেদ রবির বিরুদ্ধে জাপা প্রার্থীকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘যদি তিনি কাজকর্ম ভালো করতেন, তার কাজের অভিজ্ঞতা থাকত, তাহলে তাকে মনোনয়ন দিতেন কারণ তিনি দশ বছরের সংসদ সদস্য ছিলেন। সে অযোগ্য অপদার্থ বলেই তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। সেই ব্যক্তি আবার দাঁড়িয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাজপাখি নিয়ে। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন তার যে কুকর্মগুলো রয়েছে সেগুলো তাকে খণ্ডন করতে হবে আগে তার পরে ওনাকে জনগণের কাছে যেতে হবে। সাতক্ষীরার চার লাখ জনগণকে এ দশ বছর ওনি নিষ্পেষিত করেছে, তাকে জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে কৈফিয়ত দিতে হবে ইনশাআল্লাহ।’
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আখতার হোসেন বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আশু ভাই স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কথা বলে ভোট বাড়াতে চাচ্ছে, এটা দুঃখজনক। আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন।’
এদিকে, এ ঘটনায় গত রোববার (২৪ ডিসেম্বর) সাতক্ষীরা সদর-২ আসনে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং অফিসার বরাবর উসকানিমূলক এবং মানহানিকর বক্তব্য ও বিবৃতি ঘটনায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এমপি রবি বলেন, ‘কিছু অতি-উৎসাহী নেতা আমার ঈগল প্রতীকের নিশ্চিত বিজয় দেখে গভীর ষড়যন্ত্রে মেতেছেন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমার একজন প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুজ্জামান আশু তিনি বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা পূর্বক আমার চরিত্র হনন, উসকানিমূলক এবং মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করছেন। এটা নির্বাচনী আচরণবিধির ১১ এর ‘ক’ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমি হিংসার্থক কর্মকাণ্ড পছন্দ করি না। আসুন আমরা হিংসা বিদ্বেষ ও ষড়যন্ত্র ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি।’
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার শামীম ভূইয়া বলেন, ‘একজন প্রার্থী অন্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দিলে সেটি আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে। এ ধরনের ঘটনা আমাদের সামনে আসলেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। লাঙ্গলের প্রার্থীর বক্তব্যের বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’