সরকারি ব্রজলাল কলেজ, খুলনার অন্যতম প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে কেবল মানসম্মত শিক্ষার চর্চা নয়, বরং স্থাপত্য, সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের এক অনন্য সম্মিলন ঘটেছে। ১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শিক্ষার আলোকবর্তিকা হিসেবে ভূমিকা রেখে চলেছে।
খুলনার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই কলেজে প্রবেশ করলেই প্রথম যে জিনিসটি চোখে পড়ে তা হলো—ঔপনিবেশিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত লাল ইটের পুরোনো ভবনগুলো। ছাদে লতাগুল্মে মোড়া এই দালানগুলোর পাশে নতুন আধুনিক অবকাঠামোর উপস্থিতি—পুরাতন ও আধুনিকতার এক অপূর্ব সহাবস্থান সৃষ্টি করেছে। এই মিলনশৈলী কলেজ ক্যাম্পাসে এক অভূতপূর্ব নান্দনিকতা এনে দেয়।
বিশাল কলেজ চত্বরজুড়ে ছায়াঘেরা গাছপালা, সবুজ লন, সুপরিপাটি ফুলের বাগান, আর নিরিবিলি পাঠাকক্ষ একটি প্রশান্তিময় পরিবেশ গড়ে তুলেছে। ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে থাকা বড় বড় আমগাছের ছায়া গ্রীষ্মের দাবদাহেও শিক্ষার্থীদের স্বস্তি এনে দেয়। ছাত্রছাত্রীদের জন্য পৃথক কমন রুম ও নির্ধারিত পাঠাকক্ষ রয়েছে, যা তাদের মানসিক প্রশান্তি ও একাডেমিক মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
এই শিক্ষাঙ্গনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সহনশীলতা। ক্যাম্পাসের এক পাশে রয়েছে একটি বড় মসজিদ, আর অন্য পাশে রয়েছে একটি প্রাচীন মন্দির—যা বহুধর্মীয় ঐক্যের এক অনন্য উদাহরণ। কলেজ চত্বরে অবস্থিত বিশাল পুকুরপাড় জায়গাটিকে করে তুলেছে আরও মনোরম। সেইসাথে কলেজের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বিশাল খেলার মাঠটি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা ও শারীরিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও এখানে ছেলে ও মেয়েদের আলাদা আবাসিক হলের ব্যবস্থা আছে যা ক্যাম্পাসকে সার্বক্ষণিক আরো জীবন্ত ও প্রাণচঞ্চল করে তুলেছে।
শুধু স্থাপত্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয়, কলেজটির সাংস্কৃতিক ও একাডেমিক কর্মকাণ্ডেও নান্দনিকতার ছাপ স্পষ্ট। বার্ষিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দেয়ালিকা প্রকাশ, নাট্যচর্চা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও অন্যান্য সহপাঠ কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশে বড় ভূমিকা রাখে।
সব মিলিয়ে, সরকারি ব্রজলাল কলেজ শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি জীবন্ত ঐতিহ্য, যেখানে শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্থাপত্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একসাথে মিশে গিয়ে খুলনার গর্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি শুধু অতীত নয়, বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রতীকও বটে।
আবু মোস্তফা কামাল
অর্থনীতি (২০২০-২১)