সাতক্ষীরা–২ আসনে আব্দুল আলীমকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে উত্তাল সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার স্থানীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত ও আলোচিত একটি নাম মো. আব্দুল আলিম। তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই নেতা পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সংগঠনের সংকটময় সময়ে কর্মীদের পাশে থাকা, গ্রামীণ জনপদের মানুষের আস্থা অর্জন এবং ধারাবাহিক নেতৃত্বের কারণে সাতক্ষীরা–২ (সাতক্ষীরা–দেবহাটা) আসনে তিনি এখনো প্রভাবশালী মুখ হিসেবে বিবেচিত।

এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী আব্দুর রউফের মনোনয়ন বাতিল এবং মো. আব্দুল আলিমকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে রবিবার শহরে বিশাল মোটরসাইকেল র‌্যালি করেছেন দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
রবিবার সকাল ১১টায় বিনেরপোতা জিরোপয়েন্ট সংলগ্ন সাতক্ষীরা–খুলনা মহাসড়ক থেকে র‌্যালিটি শুরু হয়ে শহরের খুলনা রোড মোড়ে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এতে সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।

সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, “ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। অযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ধানের শীষ প্রতীকের বিজয় একমাত্র আব্দুল আলিমকে দিলে সম্ভব। নেতাকর্মীরা কোনো বহিরাগত বা দলছুট নেতার জন্য কাজ করবে না।”
তারা আরও দাবি করেন, “দলের দুঃসময়ে যিনি সংগঠন ধরে রেখেছেন, আন্দোলনে ঝুঁকি নিয়েছেন এবং নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন—মনোনয়নও তাঁরই প্রাপ্য।”

১৯৫৯ সালের ১৫ অক্টোবর সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খেজুরডাঙ্গা গ্রামে জন্ম আলিমের। তার পিতা মরহুম আবুল কাশেম ছিলেন লাবসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (১৯৬২–১৯৭১)। পারিবারিক রাজনৈতিক পরিবেশেই বেড়ে ওঠায় তরুণ বয়সেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৭৫ সালে সাতক্ষীরা পি.এন. স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাসের পর তিনি গ্রাম সরকারের সদস্য হন (১৯৭৮–১৯৮১)। এরপর লাবসা ইউনিয়নের ইউনিয়ন প্রধান (১৯৮১–১৯৮৩) এবং পরবর্তীতে ১৯৮৩–১৯৯০ সাল পর্যন্ত লাবসা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি নির্বাচিত হন সাতক্ষীরা জেলা ইউপি চেয়ারম্যান পরিষদের সভাপতি।

এরপর দীর্ঘ সময় জেলা ও থানা বিএনপির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন—

  • সহ–সভাপতি, সদর থানা ও জেলা বিএনপি (১৯৯৭–২০০৯)

  • সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জেলা বিএনপি (২০০৯)

  • সভাপতি, সদর থানা বিএনপি (২০০৯)

  • সাধারণ সম্পাদক, জেলা বিএনপি (২০১৩–২০১৬)

  • সিনিয়র সহ–সভাপতি, জেলা বিএনপি (২০১৬–২০১৮)

  • সদস্য–সচিব, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি (২০১৯–২০২৫)

তৃণমূলে কাজ করা নেতাকর্মীদের মতে, বিরোধী রাজনীতির ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে মামলা, হয়রানি ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেও আলিম এলাকা ছাড়েননি। আন্দোলন-সংগ্রামের সময় কর্মীদের পাশে থেকেছেন।

রাজনীতির বাইরে আলিম স্থানীয় শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি তালতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি এবং খেজুরডাঙ্গা আর.কে. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। এছাড়া তিনি আব্দুর রহমান কলেজের সভাপতি, গণমুখী সংঘের সভাপতি এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য।

তার দুই সন্তান—শাহিন হোসেন ও শিহাব হোসেন—নিজ নিজ ক্ষেত্রে সক্রিয়।
শাহিন হোসেন বর্তমানে লাবসা ইউনিয়ন বিএনপির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। শিহাব হোসেন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার এবং খেজুরডাঙ্গা আর.কে. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি।

সাতক্ষীরা–২ আসনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে আলিমের নাম ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে। র‌্যালির বক্তারা তারেক রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং দ্রুত মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি জানান। তারা সতর্ক করে বলেন, “দলের সিদ্ধান্ত সংশোধন না করা হলে আন্দোলন আরও বেগবান হবে।”

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

খুলনার সময়

একটি সৃজনশীল সংবাদপত্র

আমাদের ফেসবুক পেজ

আজকের দিন-তারিখ

  • বৃহস্পতিবার ,রাত ৯:৫৪
  • ২৭ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  • ৬ জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিন